বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল

Bangladesh Homoeopathic Medical Education Council

Bangladesh Homoeopathic Medical Education Council (BHMEC)

A Key Institution for Regulating Homoeopathic Education in Bangladesh

বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল ( Bangladesh Homoeopathic Medical Education Council -BHMEC ) হলো বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি শিক্ষা, গবেষণা এবং রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম পরিচালনার জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। দেশের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা যাতে একটি standard, scientific এবং internationally acceptable রূপ পায়—সে লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয় এই কাউন্সিল।

BHMEC মূলত হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ, ইনস্টিটিউট, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকদের জন্য নীতিমালা, সিলেবাস, রেজিস্ট্রেশন এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকি করে। এটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি সরকারী সংস্থা।
বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে “বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২৩” প্রণয়ন করে পূর্ববর্তী ১৯৮৩ সালের অর্ডিন্যান্সকে বাতিল করে নতুন কাঠামোতে চিকিৎসা শিক্ষা ও পেশাকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে

কাউন্সিল গঠন ও কাঠামো

বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২৩ অনুযায়ী গঠিত হবে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল, যা একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে কাজ করে। এই কাউন্সিলে রয়েছেন -

  • চেয়ারম্যান
  • গভর্নিং বোর্ড (Governing Board)
  • নির্বাহী পরিষদ (Executive Committee)
  • এবং রেজিস্ট্রার অফিস

গভর্নিং বোর্ডে জাতীয় সংসদের সদস্য, শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, সরকারি-বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক কলেজের শিক্ষক এবং গবেষণা প্রতিনিধিসহ ১৫ জন সদস্য

🎓 প্রধান দায়িত্ব ও কার্যাবলি

কাউন্সিলের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো —
  • হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের নিবন্ধন ও তালিকা প্রকাশ
  • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নির্ধারণ
  • হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া প্রণয়ন ও হালনাগাদ
  • নৈতিকতা ও পেশাগত শৃঙ্খলা বজায় রাখা
  • গবেষণা, জার্নাল ও পেশাগত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন
  • সরকারকে নীতি পরামর্শ প্রদান ও প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ

বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড থেকে কাউন্সিল হওয়ার ইতিহাস

বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরেই একটি জনপ্রিয় বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার আগে থেকেই এ পদ্ধতির চিকিৎসা প্রচলিত ছিল, তবে তা ছিল সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগের ওপর নির্ভরশীল। তখন কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা মান নির্ধারক কর্তৃপক্ষ ছিল না।

স্বাধীনতার পর সরকার বুঝতে পারে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও এর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নিবন্ধনের কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো নেই। তাই চিকিৎসার মান বজায় রাখা, শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা এবং চিকিৎসকদের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়।
🔹 বোর্ড গঠনের ইতিহাস (১৯৮৩)
এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ নং XLI এর মাধ্যমে ১৯৮৩ সালে “Bangladesh Homoeopathic Practitioners Ordinance, 1983” জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের অধীনে গঠিত হয় “বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড” (Bangladesh Homoeopathic Board)।
🔹 বোর্ডের মূল দায়িত্ব ছিল—
১. হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের নিবন্ধন ও তালিকা প্রকাশ
২. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নির্ধারণ
৩. হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া প্রণয়ন ও হালনাগাদ
৪. নৈতিকতা ও পেশাগত শৃঙ্খলা বজায় রাখা
৫. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন ও মান নিয়ন্ত্রণ করা

🔹 বোর্ডের আইনি সংকট (২০১০–২০১৩)
২০১০ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সামরিক শাসনামলে প্রণীত অনেক অধ্যাদেশকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৯৮৩ সালের হোমিওপ্যাথিক অধ্যাদেশও পড়ে যায়। ফলে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের কার্যক্রম আইনি প্রশ্নের মুখে পড়ে। যদিও ২০১৩ সালে একটি সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে কিছু অধ্যাদেশ বহাল রাখা হয়, তবুও বোর্ডের কার্যকারিতা সীমিত ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সরকার মনে করে, পুরনো অধ্যাদেশ দিয়ে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার মান, নিবন্ধন ও চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণ করা আর সম্ভব নয়। সময়ের দাবি ছিল নতুন, স্থায়ী ও আধুনিক কাঠামো।

🔹 কাউন্সিল গঠনের সূচনা (২০২৩)
দীর্ঘ আলোচনাসভা, মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সরকার ২০২৩ সালে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে —
📜 “বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২৩” (Law No. 63 of 2023)

এই আইনের মাধ্যমে ১৯৮৩ সালের পুরনো অধ্যাদেশ বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং তার জায়গায় গঠিত হয় “বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল” (Bangladesh Homoeopathic Education Council)। নতুন কাউন্সিলটি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে কাজ করে, যার কাঠামো, দায়িত্ব ও কর্তব্য আগের বোর্ডের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত ও আধুনিকায়িত।